সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) :

জনশ্রুতি রয়েছে গোঁয়া গাছত্তুন গোমাতলী। কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের ৭,৮ও ৯নং ওয়ার্ড নিয়ে বৃহত্তর গোমাতলী। গ্রামের নাম গোমাতলী হলেও চরম অবহেলার মধ্যে দিয়ে জীবন-যাপন করছে এ গ্রামে বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা। গত ১৫ মাস ধরে জোয়ার-ভাটার কারনে নেই লেখাপড়া-চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। কক্সবাজার সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কি.মি. উত্তরে এবং মহেশখালি খালের পশ্চিম পাশে ফুলছড়ি খালের তীরে গোমাতলী অবস্থিত। ফুলছড়ি-মহেশখালী খাল দ্বারা বিশিষ্ট প্যারাবন গ্রামটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। গোমাতলীতে মানব বসতির ইতিহাস মাত্র ১শ বছরের। গ্রামটি ৩টি পাড়ায় বিভক্ত। পশ্চিম-পূর্ব ও উত্তর পাড়া। গ্রামের মোট জনবসতি প্রায় ২০ হাজার। সরকারী দপ্তরের মধ্যে রয়েছে একমাত্র গোমাতলী লবণ কেন্দ্র, যোগাযোগের কারনে তাও পাশ্ববর্তী ইসলামপুরে অফিস হিসাবে ব্যবহার করছে। এই গ্রামে ১৫টি মসজিদ, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি মাদরাসা,২টি হাফেজখানা, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি সাইক্লোন সেন্টার, আনুমানিক ১ হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে। পশ্চিম গোমাতলী পাড়ায় তুলনামূলকভাবে জনবসতি বেশী। চিংড়ি চাষ লবণ উৎপাদন ও মাছের পোনা আহরন গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা। চারিদিকে নোনা পানি বেষ্টিত হওয়ায় এই গ্রামে তেমন কোন খাদ্য শষ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। দৈনন্দিন প্রয়োজনাদি জিনিসপত্র সব ঈদগাঁও বাজার থেকে ক্রয় করে আনতে হয়। ২০ হাজার মানুষের বসবাস এই গ্রামে নেই কোন সরকারী স্বাস্থ্য ক্লিনিক বা চিকিৎসক। অসুখ-বিসুখে কি করে এই গ্রামের মানুষ জানতে চাইলে গ্রামের বাসিন্দা মো: ইসমাঈল বলেন, এখানে নেই শিক্ষা-চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। নেই কোন সরকারী চিকিৎসক। প্যারাসিটামল-নাপা’ই ভরসা। ইনকামের একমাত্র পথ লবণ-চিংড়ি উৎপাদন এবং চিংড়ি পোনা আহরন। এই গ্রামে ভাল ডাক্তার-মাষ্টার-মলই পাওয়া যায় না।

তিনি দাবী করেন, গোমাতলীর প্রায় ৩ হাজার ভোটার জাতীয়-স্থানীয় নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও সবকিছু থেকে বঞ্চিত। মুলত লবন, চিংড়ী ও মৎস উৎপাদন অঞ্চল গোমাতলীকে অস্তিতে¦র সংকট থেকে রক্ষা করতে হবে। গোমাতলী মহেশখালী সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে সমুদ্রের আঘাত এসে পড়বে লবন-মৎস্য শিল্পের ওপর। অন্যথায় দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোন খ্যাত গোমাতলী চরম হুমকির মধ্যে পড়বে। মাত্র ১০ বর্গমাইলের গোমাতলী মহেষখালী সমুদ্রের অব্যাহত বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কারণে আজ ৬ বর্গমাইলে এসে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হলেও অসাধু কর্মকর্তা ও দূর্নীতিবাজদের কারণে গোমাতলী আজ বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে। অতীতের লুটপাটের সুষ্ট তদন্ত পূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীও জানান তিনি।

সদরের অপার সম্ভাবনাময় গোমাতলী পরিকল্পিত উন্নয়নের অভাবে এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এখানে উন্নয়নের কোন ছোয়াঁ লাগেনি। এখানে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্বের ৬ সুর্য সন্তান।

বিচ্ছিন্ন গোমাতলীর বাসিন্দাদের বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়। সরকারি বা বেসরকারিভাবে শিল্প বিকাশে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সরকার গোমাতলী নিয়ে কোন পরিকল্পনা গ্রহন করলে হয়তো এখানকার ২০ হাজার নারী-পুরুষ আশার আলো দেখতে পারে।